প্রশ্নের লোভ দেখিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে ‘কুকর্ম’ করতো অধ্যক্ষ সারাদেশ

প্রশ্নের লোভ দেখিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে ‘কুকর্ম’ করতো অধ্যক্ষ সারাদেশ

সোনাগাজীতে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টাকারী মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রশ্নফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদের নিজের কক্ষে ডেকে যৌন হয়রানি করতেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলায় গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তার সহযোগীরা।

এ ঘটনায় চট্রগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন ও ক্রাইম) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজের কাছে জবানবন্দী দেওয়া এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন ‘যৌন হয়রানির ব্যাপারে খুব দক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহ। ক্লাসে কৌশলে একটা-দুইটা প্রশ্ন বলে দিতেন; সেগুলো পরীক্ষায় চলে আসতো। প্রশ্নফাঁসের লোভ দেখালে ছাত্রীরা যেন বেশি বেশি হুজুরের কাছে যায় সেজন্য তিনি এসব টেকনিক অ্যাপ্লাই করতেন।’

এছাড়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহর নানা অপকর্মের বর্ণনা করেন তার একান্ত সহকারী নুরুল আমীন। তিনি জানান, ‘হুজুরের চরিত্র খারাপ জেনে আমি ছাত্রীদের হুজুরের কাছে বেশি যেতে নিষেধ করতাম। আমি যতক্ষণ থাকতাম ততক্ষণ ছাত্রীরা হুজুরের রুমে আসা যাওয়া করতো এটা দেখতাম। আমরা চলে গেলে পরে কি হতো সেটিতো আর আমি জানি না।’

তবে এ ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো কোনো মামলা হয়নি থানায়। সোমবার (৮ এপ্রিল) সকালে সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আজ সকাল ১০টার মধ্যে অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর ভাই নোমানকে থানায় যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি থানায় না গিয়ে মুঠোফোনে জানিয়ে দেন, আসতে পারবেন না। ওসি আরও বলেন, ‘নোমান জানিয়েছে এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন, তাহলে আমরা কেনো বাদী হয়ে মামলা করবো।’

এবিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মামলা করলে ভালো। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলে পরে যদি কোনো অপরাধীর নাম বাদ পড়ে যায় তাহলে সেসময় জটিলতা সৃষ্টি হবে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ বাদী না হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।’

এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসী। এছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। যৌন নির্যাতনের শিক্ষার পরীক্ষার্থীর সহপাঠী জান্নাতুল কোবরা বলেন, ‘আমরা পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে এখন খুব ভয় পাচ্ছি। আমাদের অধ্যক্ষের চরিত্র খারাপ শুনে আমরা নিজ থেকে হুজুরের কাছে যেতাম না। মা-বাবারা সবসময় আমাদের নিয়ে টেনশনে থাকে।’

নুরুল আফসার লিটন নামে সোনাগাজীর এক বাসিন্দা জানান, অধ্যক্ষ বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। তার পক্ষেতো এখন কিছু করা সম্ভব নয়। তবে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির কমিটিতে ঢোকার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন দুইভাগে বিভক্ত। অধ্যক্ষকে গ্রেফতারের পর থেকে তারা পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন-বিক্ষোভ করেছে।

এছাড়া ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউপ বলেন, প্রশ্নফাঁস ও যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সিরাজ উদ দৌলাহ। একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সেখান থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্মে জড়িত। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে সাপোর্ট দেন। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির কমিটি নিয়ে বিরোধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত থেকেও পার পেয়ে গেছেন।

তবে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহ সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানান গভর্নিং বডির সহসভাপতি ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি ব্যবস্থা নিয়েছি। এবারও আমি নিজে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে পরীক্ষারকেন্দ্র সচিব নুরুল আফসার ফারুকী জানিয়েছেন, কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সুত্র: সারাবাংলা.নেট।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment